Nayan | WritersCafe.org

Monday, September 23, 2024

ভালোবাসা আর ভয় - Bhalobasha aar Bhoy



ভয় পাও বলে কি ভালোবাসো?
নাকি ভালোবাসো তাই পাও ভয়?
বেড়ে উঠলেও বড় হওনি বোধহয়,
তাই রয়ে গেছে মনে এই সংশয়।

ভালোবাসা হলে ভয় হবে না,
ভয় থাকলে ভালোবাসা নেই,
এই দুই একসাথে থাকে না,
ভালোবাসাকে ভুল বুঝেছো তাহলে।

ভয়ের আচ্ছাদনে সন্দেহ-সংশয়রা
লুকোচুরি করে, দমবন্ধ করা
রুদ্ধশ্বাস যেখানে বুকে টিপটিপ করে,
ভালো চাওয়া সেখানে যায়না।

ভালোবাসার আঙ্গিনায় কিন্তু
কাউকে আটকে রাখা থাকে না,
নিজস্ব চাওয়া ফেলে শুধু দেখা -
যাকে ভালোবাসি, সে ভালো আছে তো!

প্রত্যাশারও স্বার্থ সেখানে ঘর করে না,
রাগ-বিদ্বেষ সেখানে আসতে পারে না,
নিজের খেয়াল যেখানে আর থাকে না,
ভালোবাসার পাত্রটিই শুধু রয়ে যায়।

ভালোবাসা সত্যের ছোঁয়া হারায়
যদি ভুলকে তার সংজ্ঞা দিয়ে বসো!
ভালোবাসা মুক্ত করে, তাতে
ধরে রাখার প্রবণতা থাকে না।

যাকে ভালোবাসো, সে তোমার! -
এটা ভাবা যে ভীষণ ভুল!
আর সে তোমারই অনুসারে চলবে! -
এ কিন্তু ভালোবাসা নয়।

জলজ্যান্ত একটি প্রাণ -
সে কীকরে তোমার-আমার হতে পারে?
জীবনকে বস্তুতে পরিণত করে যা -
কীকরে তা ভালোবাসা হতে পারে?

জীবন, ফুলেরই হোক বা মানুষের -
ফুটে ওঠে, সুগন্ধ ছড়ায়, আবার ঝরেও পড়ে।
তার ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়ানো - তাকে
মুঠোয় ধরতে গেলে তো সে মারাই পড়বে!

তাই সত্যের আলোয় এসো,
চৌদিকে চেয়ে দেখো,
ধরে রাখার নেই কিছুই এখানে,
আছে কেবলই ভালোবাসা! 

বিদ্বেষ, বেদনা, সন্দেহ, সংশয় 
মুক্ত হও, দেরি করো না আর!
অনেক করেছো বহন,
এবার ফেলে দাও এই ভার!

সত্যকে বুঝতে সাহসী হও
বন্ধু, মিথ্যা করোনা হাহুতাশ!
চোখ খুলে চাও, দেখো
আলো, জল আর বাতাস!

-- নয়ন
সোমবার, 23 সেপ্টেম্বর 2024
দুপুর 12:45, পাটনা

Thursday, September 5, 2024

পেয়ারা গাছ - Guava Tree

 




আমার প্রিয় পেয়ারা গাছটি আজ বৃদ্ধ!
আজ তাকে কেটে ফেলার কথা হয়!
কিন্তু আমার স্পষ্ঠ মনে আছে -
পেয়ারা গাছের সঙ্গে আমার ছোট বেলার খেলা,
তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বাল্য কালের
এবং একটু বড় বয়সের সুখ-দুঃখ!

সেই যখন খুব ছোট্ট আমি -
পেয়ারা গাছটি আমার কাছে
বিশাল কিছু মনে হত,
আমি মাথা উঠিয়ে দেখতাম
বড় পেয়ারা গাছ কে -
খুব ভাল লাগত আমার তাকে!


আবার হয়ত সে একজন বন্ধুর মত
যখন আমি একটু বড় হলাম, তখন
আমার সমস্ত আনন্দ-কষ্টের কথা -
পেয়ারা গাছকেই তো বলতাম, আমি!
মনে হতো সে -
    আমার আনন্দে আনন্দিত,
    আমার দুঃখে পীড়িত,
    আমায়ে উচ্ছসিত করছে,
    নিরাশায়ে আশার আলো দেখাচ্ছে!

কিম্বা হয়ত সে একজন গুরুজন -
আমায়ে ঠিক পথ চিনিয়েছে
যখন-যখন আমি পথ হারিয়েছি!
ভগবানের মত, আমার মায়ের মত
অন্ধকারময় জীবনটাকে প্রকাশিত করে তুলেছে!

      *   *   *

এবার একটি আশ্চর্য ঘটনা বলি -
    পেয়ারা গাছের পাশের উঠুনের একটি অংশ
    একটু ফেটে গিয়েছিল -
    বোধ হয় তারই শিকড়ের জন্য।
    সেটাকে সিমেন্ট দিয়ে বন্ধ করা হয়, কিন্তু -
    মায়ের পায়ের ছাপ তাতে পড়ে যায়!
    আমি দুঃখের দিনে সেই ছাপটিকে
    কত বার প্রনাম করেছি!

      *   *   *

আজ আর পেয়ারা গাছের তলে
মায়ের পায়ের সেই ছাপটিকে খুঁজে পাই না!
হয়ত সেটা মিটে গেছে, বা
ধুলায়ে চাপা পড়ে গেছে -
তার বোধহয় আর অস্তিত্ব নেই!

আমার প্রিয় পেয়ারা গাছটিও আজ বৃদ্ধ,
তার অনেক ডাল পাতা শুন্য,
বেশির্ভাগ পাতা হলুদ হয়ে গেছে!
এমন কখনও হয়নি! মনে পড়ে -
    ক্লাসে এভারগ্রীন গাছের পাতা সাটতে দিয়েছিল -
    আমি পেয়ারা গাছের পাতা সেঁটে নিয়ে গিয়েছিলাম!

হয়ত, দীর্ঘদিনের অযত্নে,
দারুন ক্ষতি হয়েছে!
মনে হয়, যেন সে নিজের
মহা-মরণের জন্য তৈরী হচ্ছে!
তাকেও বোধহয় কিছু দিন পরে -
খুঁজে পাওয়া যাবে না!
তারও ওই মায়ের পায়ের ছাপের
মতো, অস্তিত্ব থাকবে না!

আমার প্রিয় পেয়ারা গাছ,
প্রানের থেকেও প্রিয়!
আমার কাছে কখনও আশ্চর্য কিছু,
বিশাল কিছু, বড় ভাল কিছু!
কখনও বা বন্ধুর মত, সখার মত!
আবার কখনও গুরুজনের রূপে,
ভগবানের রূপে, মায়ের রূপে!
আমার সুখ-দুঃখের সাথী,
    দুঃসময়ের সাহারা,
আলো আর অন্ধকারের জীবনে
    আমার পথ-দ্রষটা!

আমার পেয়ারা গাছের,
আমার মাঝ থেকে
চলে যাবার আগে, আমি -
    পেয়ারা গাছের একটি ছবি
    নয়নের ক্যামেরা দিয়ে তুলে
    রেখে দেবো মনের এলবামে!

নয়ন 
সোমবার, 29 ডিসেম্বর 2003
পাটনা

(পেয়ারা গাছের ছবিটি অনেক পরে 2024 সালের 5 সেপ্টেম্বরে তোলা। তখন গাছটি বেঁচে উঠেছে। কবিতাটি অনেক আগে লেখা।)